পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ সালের ৯নং আইন।
ধারা-১; শিরোনাম ও পরিধিঃ এই আইন পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ নামে অভিহিত হবে। যা ২০১২ সালের ৯নং আইন। যা প্রকাশিত হয় ৮মার্চ ২০১২খ্রিঃ।
ধারা-২; সংজ্ঞা সমূহ-
পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন-২(ক) ধারা; অপরাধঃ অপরাধ অর্থ এই আইনে সংঘঠিত কোন অপরাধকে বুঝায়।
পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন-২(খ) ধারা; উপযুক্ত ব্যক্তি/উপযুক্ত কর্তৃকপক্ষঃ সরকার কর্তৃক সময়ে সময়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বুঝাবে।
পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন-২(গ) ধারা; পর্নোগ্রাফীঃ পর্নোগ্রাফী অর্থ-
০১। যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোন অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যাহা চলচ্চিত্র, ভিডিও, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থির চিত্র, গ্রাফিকস্ বা অন্য কোন উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই।
০২। যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, সাময়িকী, ভাস্কর্য, কল্পমূতি, মূর্তি, কার্টুণ বা লিফলেট।
০৩। উল্লিখিত বিষয়াদির নেগেটিভ ও সফট্ বার্সনকেও পর্নোগ্রাফী বুঝাবে।
পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন-২(ঘ) ধারা; পর্নোগ্রাফীর সরঞ্ছামঃ পর্নোগ্রাফীর সরঞ্জাম বলতে বুঝায়-পর্নোগ্রাফী উপৎপাদন, সংরক্ষণ, ধারণ বা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ক্যামেরা, কম্পিউটার, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ, সিডি, ভিসিডি, ডিভিডি, অপটিক্যাল ডিভাইস, ম্যাগনেটিক ডিভাইজ, মোবাইল ফোন বা তার যন্ত্রাংশ এবং যে কোন ইলেক্টনিক, ডিজিটাল বা অন্য কোন প্রযুক্তিভিত্তিক ডিভাইজ বুঝাবে। প্রশ্নঃ পর্নোগ্রাফী আইন মোতাবেক পর্নোগ্রাফীর সরঞ্ছামকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে? আলোচনা করুন।
পর্নোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন-২(ঙ) ধারা; শিশুঃ শিশু বলতে শিশু আইন অনুযায়ী সংজ্ঞায়িত শিশুকে বুঝাবে।
ধারা-৩; আইনের প্রাধান্যঃ আপাতত বলবৎ অন্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলীই প্রাধান্য পাবে।
ধারা-৪; পর্নোগ্রাফি সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ ইত্যাদি নিষিদ্ধঃ পর্নোগ্রাফী উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ, বহন, সরবরাহ, ক্রয়, বিক্রয়, ধারণ বা প্রদর্শন করা যাবে না।
ধারা-৫; তদন্তের সময়সীমাঃ এই আইনের ক্ষেত্রে সংঘটিত কোন অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে-
০১। পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর বা তার সম-মর্যাদার নিম্নে নহেন এমন কোন কর্মকর্তা তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে ফৌজদারী কার্যবিধির বিধানাবলী অনুযায়ী তদন্ত করবেন।
০২। তদন্তের সময়সীমা হবে-৩০(ত্রিশ) কার্যদিবস এবং যুক্তি সংগত কারণে উক্ত সময়সীমার মধ্যে
তদন্তকার্য সমাপ্ত করা সম্ভব না হলে, পুলিশ সুপার বা সমপদমর্যাদার কর্মকর্তা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তদূর্ধ্ব কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে অতিরিক্ত ১৫(পনের) কার্যদিবস সময় বৃদ্ধি করা যাবে।
০৩। উপধারা-২ অনুযায়ী উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে যুক্তিসংগত কারণে কোন তদন্তকার্য সমাপ্ত করা সম্ভব না হলে, আদালতের অনুমোদনক্রমে আরো ৩০(ত্রিশ) কার্যদিবস সময় বৃদ্ধি করা যাবে।
ধারা-৬; তল্লাশি ও জব্দ ইত্যাদিঃ এই আইনের অধীন নি¤œলিখিত পদ্ধতিতে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালিত হবে-
০১। পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর এর নিম্নে নহেন এমন কর্মকর্তা অথবা সরকারের নিকট হতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন উপযুক্ত ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ ফৌজদারী কার্যবিধিতে বর্নিত পদ্ধতি অনুসরণ করে অপরাধের সাথে জড়িত কোন ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক ক্ষেত্রে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে বা কোন পর্নোগ্রাফী সরঞ্জাম উদ্ধার বা জব্দের ক্ষেত্রে তল্লাশি কার্য পরিচালনা করতে পারেন।
০২। তল্লাশিকালে জব্দকৃত সফট্ কপি, রূপান্তরিত হার্ডকপি, সিডি, ভিসিডি, ডিভিডি, কম্পিউটার বা অন্য কোন ডিভিইজ বা এক্সেসরিজ, মোবাইল ফোন বা উহার যন্ত্রাংশ, অপরাধ সংঘটনে ব্যবহৃত অন্য কোন যন্ত্রাংশ বা সরঞ্জাম, ইলেক্ট্রনিক উপায়ে ধারণকৃত কোন তথ্য বা মেমোরি ইত্যাদি আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। (ডিজিটাল ইভিডেন্সের সাক্ষ্যগত মূল্য) প্রশ্নঃ পর্নোগ্রাফী আইন মোতাবেক তল্লাশিকালে প্রাপ্ত ডিজিটাল আলামতের সাক্ষ্যগত মূল্য আলোচনা করুন।
০৩। এ আইনের অধীনে সংঘটিত কোন অপরাধ তদন্তকালে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন বা অন্য কোন সরকারী উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ, মোবাইল অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, বৈধ ভিওআইপি সার্ভিস প্রোভাইডারসহ সরকারী বা সরকারের নিকট হতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত অনুমোদনপ্রাপ্ত কোন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের নিকট স্বাভাবিক কার্যপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সংরক্ষিত তথ্য বা তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক সংগৃহীত কোন বিশেষ তথ্য আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। (বিশেষজ্ঞের মতামত গ্রহনীয়)
ধারা-৭; বিশেষজ্ঞ মতামতের সাক্ষ্যগত মূল্যঃ এ আইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধ তদন্তকালে উপযুক্ত কর্তৃকপক্ষ কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত কারিগরী বিশেষজ্ঞ অথবা যে সকল প্রক্রিয়ায় উক্ত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেই সকল বিষয়ে কারিগরি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কারিগরি বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের অথবা সরকারের নিকট হতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গের নিকট হতে প্রাপ্ত মামত বিশেষজ্ঞের মতামত হিসেবে বিবেচিত হবে এবং তা আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
ধারা-৮; দন্ড সমূহঃ
ধারা-৮(১); কোন ব্যক্তি-
* পর্নোগ্রাফী উৎপাদন করলে;
* উৎপাদনের নিমিত্ত্বে অংশগ্রহনকারী সংগ্রহ করে চুক্তিপত্র করলে;
* কোন নারী, পুরুষ বা শিশুকে অংশগ্রহন করতে বাধ্য করলে;
* কোন নারী, পুরুষ বা শিশুকে কোন প্রলোভনে অংশগ্রহন করিয়ে তার জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে স্থিরচিত্র, ভিডিওচিত্র বা চলচ্চিত্র ধারণ করলে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে-যার শাস্তি ০৭(সাত) বছর সশ্রম কারাদন্ড/০২(দুই) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
ধারা-৮(২); কোন ব্যক্তি-
** পর্নোগ্রাফীর মাধ্যমে অন্য কোন ব্যক্তির সামাজিক/ব্যক্তি মর্যাদা হানি করলে;
** ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় করলে;
** ভয়ভীতির মাধ্যমে অন্য কোন সুবিধা আদায় করলে;
** কোন ব্যক্তির জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে ধারণকৃত কোন পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তিকে মানসিক নির্যাতন করলে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে-যার শাস্তি ০৫(পাঁচ) বছর সশ্রম কারাদন্ড/০২ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
ধারা-৮(৩); কোন ব্যক্তি-
** ইন্টারনেট/ওয়েবসাইট/মোবাইল ফোনের মাধ্যমে/অন্য কোন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফী সরবরাহ করেন তাহলে তা অপরাধ বলে গন্য হবে। যার শাস্তি ০৫(পাঁচ) বছর সশ্রম কারাদন্ড/০২ (দুই) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
ধারা-৮(৪); কোন ব্যক্তি-
** পর্নোগ্রাফী প্রদর্শনের মাধ্যমে গণউদ্রুপ সৃষ্টি করেন তাহলে তিনি অপরাধ বলে গন্য হবে। যার শাস্তি ০২(দুই) বছর সশ্রম কারাদন্ড/০১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
ধারা-৮(৫); কোন ব্যক্তি-
ক। পর্নোগ্রাফী বিক্রয়, ভাড়া, বিতরণ, সরবরাহ, প্রকাশ্য প্রদর্শন বা যে কোন প্রকারে প্রচার করলে/উক্ত সকল বা যে কোন উদ্দেশ্যে প্র¯দত, উৎপাদন, পরিবহন বা সংরক্ষণ করলে-
খ। কোন পনোগ্রাফী প্রাপ্তি স্থান সম্পর্কে কোন প্রকারের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে;
গ। এই উপ-ধারার অধীন অপরাধ বলে চিহ্নিত কোন কার্য সংঘটনের উদ্যোগ গ্রহন করেন তাহলে তিনি অপরাধ বলে গন্য হবে।
যার শাস্তি ০২(দুই) বছর সশ্রম কারাদন্ড/০১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে।
ধারা-৮(৬); কোন ব্যক্তি কোন শিশুকে ব্যবহার করে-
** শিশু পর্নোগ্রাফী উৎপাদন, বিতরণ, মুদ্রণ ও প্রকাশনা করলে;
** শিশু পর্নোগ্রাফী বিক্রয়, সরবরাহ বা প্রদর্শন;
** কোন শিশু পর্নোগ্রাফী বিজ্ঞাপন প্রচার করলে অপরাধ বলে বিবেচিত হবে- যার শাস্তি ১০(দশ) বছর সশ্রম কারাদন্ড/০৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে।
ধারা-৮(৭);এআইনের অধীন সংঘটিত কোন অপরাধের সহিত প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বা সহায়তাকারী ব্যক্তি প্রত্যেকেই একই দন্ডে দন্ডিত হবেন।
ধারা-৯; কতিপয় ক্ষেত্রে আইনের অপ্রযোজ্যতাঃ
** ধর্মীয় উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত বা ব্যবহৃত কোন পুস্তাক, লেখা, আঙ্কন বা চিত্র অথবা-
** যে কোন ধর্মীয় উপাসনালয় বা উহার অভ্যন্তরে বা প্রতিমাসমূহ পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত অথবা-
** যে কোন যানবাহনের উপর খোদাইকৃত, মিনাকৃতি, চিত্রিত বা প্রকারান্তরে প্রতিচিত্রিত অথবা-
** কোন ধর্মীয় উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত কল্পমূর্তি বা স্বাভাবিক শিল্পকর্মের এ আইন প্রযোজ্য হবে না।
ধারা-১০; অপরাধের আমলযোগ্যতাঃ
অত্র আইনের অপরাধ সমূহ হবে-আমলযোগ্য এবং অ-জামিনযোগ্য।
ধারা-১১; বিচার পদ্ধতিঃ এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধের বিচার ফৌজদারীতে বর্নিত পদ্ধতি অনুযায়ী হবে। তবে শর্ত থাকে যে, সরকারী, সরকারী গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা, কোন বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালকে অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা অর্পন করতে পারবেন।
ধারা-১২; আপিলঃ এই আইনের অধীন কোন আদালত বা ক্ষেত্রমত ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রদত্ত কোন রায় বা আদেশ দ্বারা সংক্ষুবদ্ধ ব্যক্তি উক্ত রায় বা আদেশ প্রদানের তারিখ হতে ৩০(ত্রিশ) দিনের মধ্যে এখতিয়ারা সম্পন্ন আদালতে আপিল করতে পারবেন।
ধারা-১৩; মিথ্যা মামলা অভিযোগ দায়ের ইত্যাদি-
ধারা-১৩(১); যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষতিসাধনের অভিপ্রায়ে মামলা বা অভিযোগ দায়েরের কোন ন্যায বা আইনানুগ কারণ নাই জানা সত্তে¡ও মিথ্যা বা হায়রানীমূলক মামলা বা অভিযোগ দায়ের করলে তিনি
অপরাধ করেছেন বলে গন্য হবেন। তার উক্ত কর্মকান্ডের জন্য ০২(দুই) বছর সশ্রম কারাদন্ড/০১(এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
ধারা-১৩(১); এই আইনের অধীন দায়েরকৃত কোন মামলায় আদালত বা ট্রাইব্যুানাল শুনানী শেষে যদি অভিযুক্তকে খালাস প্রদান করে এবং আদালত এই মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, উক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, হয়রানীমূলক তাহলে মামলা দায়েরকারী ব্যক্তি অপরাধ করেছেন বলে গন্য হবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য ০২(দুই) বছর সশ্রম কারাদন্ড/০১(এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
*****************ধন্যবাদ************